হেয়ালীপনা ও অবজ্ঞায় প্রাণ কেড়ে নেওয়া যায় কিন্তু প্রাণান্ত চেষ্টায়ও কি একটি জীবন পূর্ণদান করা যায় ? তাই কোন জীবন হানির পূর্বে শত সহস্ত্রবার ভেবে দেখা অত্যাবশ্যক | একরামুল হত্যা কাণ্ডের দ্বায় সারা তদন্তের ফলাফল সহজেই অনুমেয় | যেখানে সরকার দলের সাধারণ সম্পাদক বলেই দিয়েছেন “ দু একটি ভুল হতেই পারে “ তার মানে বিশ্লেষণ অনাবশ্যক |
কেন যেন মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী খুব শিগগিরই টেকনাফের নিহত কমিশনার একরামুল হকের পরিবারকে গণভবনে ডাকবেন। একরামের স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে এবং দুই কন্যা ও এক পুত্রের অশ্রু মুছে দিতে-দিতে, কপালে যথাসম্ভব ভাজ ফেলে, চোখ ও ঠোঁট যথাসম্ভব কাঁদো-কাঁদো করে, মুখমণ্ডল জুড়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ শোকাচ্ছন্ন আবহের প্রতিচ্ছবি দিবেন আর মিডিয়া কর্মীরা ছবি উঠাবেন আপন খেয়ালে |
একরামের তিন সন্তানের পড়ালেখার গুরু দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেবেন তার সাথে থাকতে পারে সরকারি তহবিলের নগদ তোহফা এবং তার স্ত্রীকে টেকনাফ পৌরসভায় একটি চাকরির বন্দোবস্তও করে দিতে পারেন | মেয়ে দুটুকে জড়িয়ে ধরে নিজের স্বজন হারানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে অসাড় শান্তনার বাণী আওড়াতে পারেন | ব্যাস, প্রধানমন্ত্রীর স্তাবকরা তাকে ‘মাদার অব টেকনাফ’ খেতাবে ভূষিত করার সুযোগ সন্ধানী কর্মে ব্যস্ত হয়ে পরবে|
গণভবনে তোলা ছবিগুলো এর পর তৈল মর্দনকারী গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে।একটা সময় পর্যন্ত অস্থির পরিস্থিতি আচ্ছাদিত থাকার পর এবং একরামের হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করতে না পারার অমানসিক যন্ত্রণা পোহানোর পর সরকারি চাটার দল এই ছবিগুলো পেয়ে স্বস্তির দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলবে, মনে তুলবে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর ।দীর্ঘদিন ধরে শিকার বিহীন হিংস্র জানোয়ার যেমন নিরীহ শাবকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে , কান্ড জ্ঞানহীন সুযোগ সন্ধানী চাটার দল ছবিগুলোর ওপরও একইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
চাটার দলের কেউ-কেউ অতিমানবীয় আবেগ প্রকাশের ছলে ছবিগুলোকে বানাবে প্রোফাইল পিকচার, কেউ-কেউ বানাবে কাভার ফটো। উল্লাসে উদ্বাহু চাটারুরা ক্যাপশনে লিখবে— যতদিন আপার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। যে-প্রথম আলো পড়েন না বলে তাদের আপা সদম্ভে প্রচার করেন, সেই প্রথম আলোরই উদ্ভাবিত স্লোগান (যতদিন তোমার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ) দিয়ে আপা-বন্দনা করবে
মেধা সন্ত্রাসী চাটার দল। কেউ-কেউ ক্যাপশনে লিখবে— কী রে, সুশীলের দল! বলেছিলাম না আপা কিছু-একটা করবে? হলো তো এবার? এবার তোরা কই পালাবি ? দেশটাকে আপা কি তোদের চেয়ে কম ভালোবাসে? কখন কী করতে হবে; সেটা মাদার অব হিউম্যানিটি, বিদ্যা নন্দিনী, নতুন আবিষ্কৃত গণতন্ত্রের মানস কন্যা ,দেশরত্ন শেখ হাসিনা তোদের চেয়ে অধিক ভাল বুঝে ।
যারা চাটার ওপর তস্য চাটা, অর্থাৎ যারা চাটুকারেরও চাটুকার; মন্তব্যের ঘরে সেসব সেকেন্ডারি চাটার দল লিখবে— ভাই/ ভাই, আমার ভাই/ জি, ভাই/ ঠিক বলেছেন, ভাই/ একদম মনের কথাটা বললেন, ভাই/ সহমত, ভাই/ যদু ভাই— মাদার অব হিউম্যানিটির বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড/ যদু ভাইকে পরবর্তী এমপি প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই/ যতদিন ভাইয়ের হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ/ যদু ভাইয়ের ভয় নাই , আমরা আছি তোমার সাথে /পাশে আছি, ভাই/ এত সত্য কথা কীভাবে বলেন, ভাই। আর মুক্তিযুদ্ধের সঞ্জীবনীশক্তি ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের ওপর লেবুর বুলডেজার চালিয়ে অন্তত পঁচানব্বই শতাংশ দল কানা চাটুকার মন্তব্য করবে— জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
পরবর্তীতে ,একরাম নাম লেখাবেন সাগর-রুনি-তনু-বিশ্বজিৎ সহ অজানাদের দলে, হারিয়ে যাবেন পাদ প্রদীপের আলো থেকে; অবতারণা হবে নতুন কোন হট নিউজ , নতুন কোনো একরাম এসে দখল করবেন আমাদের আলোচনার টেবিল। অবশ্য এমনও হতে পারে প্রধানমন্ত্রী একরাম ইস্যুতে বুদ্ধিমত্ত্বার নির্বিকার ভূমিকায় থেকে , আগামীকালই গণভবনে সহাস্যে ইফতার করবেন তার একান্ত বাধ্যগত শিয়াল পন্ডিত কবিদেরকে নিয়ে অথবা পরবর্তী সাংবাদিক-সম্মেলনে একরাম ইস্যুতে সোজা একবাক্যে তিনি বলে দেবেন— ‘সরকারকে বিব্রত করতে ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাকে বিতর্কিত করতে বিএনপি-জামায়াত এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে’ অথবা ঘরে ঘরে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের নয় ।
এক বটিকায় সর্ব সমস্যার সমাধান । এর পর প্রধানমন্ত্রী নতুন কিছু রাঁধবেন, নাতনিদের সাথে রঙ্গ রসে মেতে উঠবেন, বঙ্গোপসাগরে পা ভেজাবেন, বোনের সাথে বরফ-বরফ খেলবেন, রংপুরে রিকশায় চড়বেন, গোপালগঞ্জে ভ্যানে চড়বেন এবং সেসবের ছবি কাভার ফটো বানিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকবে এই বদিমাতৃক বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কাল বাদে পরশু একরামকে ভুলে যাবে, ভুলবে না কেবল তার তিনটে সন্তান। যারা পিতৃহারা বেদনায় কাতরাবে আমরণ | পিতৃ শূন্যতায় বেড়ে উঠবে অন্য কারো ছায়ায় | অবিরাম ধিক্কার জানাবে রাষ্ট্রের ব্যর্থ পৃষ্টপোষকতাকে |