কুরবানীর চামড়া

 

                             কুরবানীর চামড়া

 

চলমান বিশ্বে নানান অদ্ভুত , নির্বোধ  ঘটনার উৎপত্তির স্থল বাংলাদেশের মত দ্বিতীয় কোন দেশ আছে কিনা আমার জানা নাই । চিত্র নাট্যের মতোই একের পর এক ঘটে যাচ্ছে বহুব্রীহি ঘটনা চক্রের মুহুর্মুহু মহড়া ।রীতিমত এড়িয়ে চলছি এসব প্রত্যাহিক চিত্র । বিবেকের তাড়নায় যে বিষয়টিকে নিয়ে কলম না ধরলে নিজেকে নিজেই ক্ষমা করা অসম্ভব । চামড়া , হাঁ পবিত্র ঈদুল আযহার পশুর চামড়া নিয়ে যে অমূলক বাণিজ্য দেখলাম তা কোন ভাবেই সভ্যতার সাথে যায় না । আমদানি রপ্তানি কিংবা চামড়া শিল্প জাত দ্রব্যের সংশ্লিষ্ট আলোচনায় মনোনিবেশ করার ইচ্ছা সংবরণ করেছি সেই কবেই । বাংলাদেশের কে না জানে কোরবানির পশুর বিক্রয়লব্ধ অর্থ কাদেরকে অর্পণ করতে হয় ? কোরবানির মহান উদ্দেশ্য কি চামড়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নয় ? একেবারে সুনির্দিষ্ট করে বললে কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রয়ান্তে প্রাপ্ত অর্থের একমাত্র হকদার সমাজের নিগৃহীত মানবকুল । উনাদেরকে গরিব বলতে আমার যথেষ্ট দ্বিধা আছে । ইহ্কূলের আমরা সবাই গরিব , গণি বা ধনী হচ্ছেন মহান রব আল্লাহ তায়ালা ।বরং আর্থিক অসচ্ছল বলাই বাহুল্য । যা হউক , আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে , কোরবানীকৃত পশুর চামড়ার বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যায় তার একমাত্র হকদার হচ্ছেন আর্থিক অসচ্ছলতায় রিষ্ট পৃষ্ঠ মানবকূল ।এবারের ঈদে চামড়ার মূল্য ছিল স্মরণকালের সর্ব নিন্ম । কোরবানি দাতারা যার ক্ষোভ ঝেড়েছেন চামড়া মাটি চাপা দিয়ে , নদীতে নিক্ষেপ করে । পরিবেশ বান্ধব কেউ কেউ আবার রাগ মিটিয়েছেন চামড়া মাটি চাপা দিয়ে । এসব প্রতিবাদী কর্ম কাণ্ডে সুবিধাভুগী ব্যাবসায়ীরা লাভের টাকা পকেটে না পুরতে পারলেও নিজের কোন আর্থিক ক্ষতি গুনতে হয়নি ।

অবশ্য যারা এই টাকার হকদার উনারা এই অর্থ দিয়ে কোন বাড়ি গাড়ি কিংবা শেয়ার বাজারে লগ্নি করার অভিপ্রায়ে অভিপ্রেত ছিলেন না । হয়তো কোন বিধবা বুড়ি মা এই চামড়ার টাকা নিয়ে দুবেলা দুমুঠো সুস্বাদু অন্নের সন্ধান করতেন । কোন এক জনম দুঃখী মা উনারা ছেড়া কাপড়টুকু বদলানোর ক্ষণ হিসেবে ঈদের চামড়ার টাকাটিকেই অবলম্বণ হিসেবে নিয়েছিলেন । সমস্যায় জর্জরিত কোন পিতা হয়তো সাংসারিক কোন ঝামেলার ইতি টানার জন্যে চামড়ার এই অর্থের ভরসা করেছিলেন । উনাদের হকের এই টাকা উনাদের ইচ্ছা ও প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করার করার পরিকল্পনা কোনভাবেই দোষের কিছু হতে পারে না ।

গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো চর্বিত চর্বনে অভ্যস্ত কুপমন্ডুক রাজনৈকদের কাছে আমার প্রত্যাশা খুবই সীমিত । খুলাশা করে বলতে গেলে, তৈলবাজি আর উদরপূর্তি ছাড়া অন্য কোন কাজেই তিনারা পারদর্শীতার ছাপ রাখতে পারছেন বলে এক মত হতে পারছি না ।

হাক্কুল ইবাদা বা আল্লাহর হক মহান রব চাইলেই ক্ষমা করে দিতে পারেন ।হাক্কুল্লাহ বা বান্দার হক নষ্টকারীকে  আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ততক্ষন ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ না হকদার ক্ষমা করবেন । সুতরাং চামড়ার টাকা প্রাপ্তি যাদের অধিকার ছিল উনারা রাজনৈতিক অথবা ব্যাবসায়িক কারসাজির নগ্ন শিকারে অধিকার বঞ্চিত হয়েছেন ।একথা অনস্বীকার্য যে , অধিকার বঞ্চিতরাই কেবল ক্ষমার অধিকার রাখে ।

আমার ব্যাথিত হৃদয়ে মহান রবের প্রতি আকুল আর্জি , হে আল্লাহ আপনি সুবিধাভুগী ও অধিকার হরণকারীদের সুবিচার নিশ্চিত করবেন । অর্থ কষ্টে যাপিত মানবকূলের প্রতি আপনার অপার রহমতের দরজা খুলে দিয়ে উনাদের সকল সমস্যা দূর করে দিন ।